- বানিয়াচংয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
- মানবতার দোয়ারে সুমনের আর্তনাদ আমাকে বাঁচান! আমি বাঁচতে চাই?
- সাংবাদিক এম. এ ওয়াহিদ চৌধুরী’র জন্মদিন উদযাপন করলো সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব
- কবিতা | একুশে ফেব্রুয়ারি | জান্নাতুন নাইম স্নেহা
- সোমা মুৎসুদ্দী’র কবিতা | মেঘের দেশ
- নবকণ্ঠ সাহিত্য আসর আয়োজিত সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা-৩৭ এর ফলাফল প্রকাশ
- ওসমানী বিমানবন্দরে সংবর্ধিত হলেন আমেরিকা প্রবাসী কাজী এম মাসুক আহমেদ
- দিরাইয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা | আমার সিলেট
- সৎ সঙ্গ পারে সুপথে পরিচালিত করতে | শওকত আখঞ্জী
- ইউ কে প্রবাসী সাইফুল ইসলামকে নিজ এলাকায় সংবর্ধনা প্রদান
» কবি মামুন সুলতান’র একগুচ্ছ কবিতা
প্রকাশিত: 20. June. 2020 | Saturday

সব ঘর পৃথিবী এখন
ঘাসের মাদুরে হেঁটে গোবর পোকা ভাবে
শিশির ডোবানো ঘাসে গড়ে তার পৃথিবী
তিনকক্ষের এই ঘরে ঘুরে ঘুরে ভাবি
পৃথিবী শুয়েছে আজ কক্ষবাদী ঘরে।
পৃথিবী মাড়িয়ে মন খুঁজেছিলো পৃথিবীর পথ
হাজার দুয়ারে ঘুরে তবুও উদাস ছিলো চোখ
সাগর নাভীতে চড়ে চলে গেছি পাহাড় চূড়ায়
সব শখ বেঁধে আজ ঘরে আছি কুনোব্যাঙ।
চোখের বেলাজ ধনু ধুয়েছিলো রমণীর বুক
ঠোঁটের হাসি রাঙিয়ে ঘুরতে আসা লাস্যলাবণী
তারে দেখে কতবার কিনে নিতাম কামের হেঁসেল
আর পারি না এখন আহা কই সোনালি সময়?
মনের সব আহ্লাদ চাপা দিয়ে চোখ বুজে রই
চোখের সিনান নেই শখের ঘুরবেলা নেই
উদাস উদরে খুলি পৃথিবীর চোখ
গৃহকোণে মজি আজ মজাইল সুপারি যেমন।
যদি মরে যাই
যদি খবর পাও আমি নেই
শেষরাতে শেষ নিশ্বাস ছেড়ে
বিদায় নেয় যদি আমার প্রাণ
যদি জেনে যাও
এই উপত্যকায় আমি আর নেই
তখন হে বন্ধু আমার জন্য জায়নামাজে বসে যেও
দুরাকাত নামাজ বকসে দিয়ো আমার আত্মায়
দিন রাত কত কথা বলেছি
হাসি গানে প্রেমে অপ্রেমে মিশেছি তোমার আড্ডায়
কত আচানক ভাবনায় বুনেছি দুনিয়ার জামা
সব ছেড়ে যদি আজ চলে যাই
কথার অবসরে নিশ্চুপ হলে
আমায় মনে রেখো তোমার মোনাজাত বেলায়
যদি কখনো আর দেখা না হয়
কথা না হয়
আমোদবেলা যদি আর ফিরে না আসে
যদি শুনো আমার প্রাণ উড়ে গেছে
কেঁদে কেঁদে অভিশাপ দিয়ো না বন্ধু
যদি পারো ক্ষমার জন্য প্রার্থনায় বসে যেয়ো
কত মনের কত কথা বলেছি আমার কবিতায়
শ্রমিকের সুঠাম শরীর গেঁথে দিয়েছি তাতে
প্রেমিকের বেদনায় নীল হয়েছে শব্দাকাশ
নারীর অধিকার দিয়েছি তুলে মিছিলের শ্লোগানে
আপন বেদনায় ব্যথিত করেছি কবিতার হৃদয়
সব ছেড়ে যদি আজ চলে যাই
স্মরণে রেখো আমায় তোমাদের স্মরণসভায়।
জীবনের মহাদুঃখ
প্রতি প্রত্যুষে জেগে যে প্রত্যাশা নিয়ে চোখ খুলি
ভোরের ভোমরা হয়ে বসি ফলবন্ত ফুলের ডগায়
সেই ফুল্লরা পেখম উড়ন্ত ঊষার চুমু খেয়ে
আজকাল কেউ দাঁড়ায় না এলোমেলো চুলে
চোখ কচলাতে কচলাতে কেউ বলে না সুপ্রভাত
ঊষার দুয়ার মেলে দুতলার সিঁড়ি ভাঙে না কেউ
কলেজ পড়ুয়া তিন্নি নেকাব টানতে টানতে আর
আড়চোখে তাকায় না হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চোখে
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে হাত থেকে আর পড়ে না রুমাদির লালচিরুনি; সব প্রেম বন্ধ্যা হয়ে গেছে
অক্টোপাস হয়ে আছে বন্ধ জীবনের চৌকাঠ
তিমির ক্রন্দনে চোখ ফুলে ফুলে লাল হয়ে গেছে
অযত্নে রয়েছে পড়ে অফিসকালীন গহনা শাড়ি লিপস্টিক আর টিপে স্যাঁতা পড়ে গেছে
বহুদিন খোলা হয়নি মেকাপ বক্সের চাবি
খোঁপায় বেঁধেছে দিনা বন্দি জীবনের মহাদুঃখ
আজকাল কোথাও নেই হাসিখুশি সরস সকাল
বাসিফুলের মতোন নির্জীব আজিকার চারিধার
উবে গেছে আমাদের প্রত্যাশার প্রগাঢ় প্রসূন
নষ্ট ঘড়ির মতোন থেমে আছে আমাদের অষ্টপ্রহর।
এই যুদ্ধে কোন শত্রুপক্ষ নেই
পৃথিবীর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দাবিয়ে বেড়ানো
ছোঁয়াচে সংক্রামক খেয়ে ফেলছে মানবজীবন
জার্মান ইতালি চীন আমেরিকার জাত্যাভিমান
সাম্রাজ্যবাদীর রক্ত খেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশে
দুরন্ত খ্যাপার মত গলা চেপে হরণ করছে প্রাণ
আর কোথায় পালাবে অসহায় মানব জাতি
ভরসার সব আশা ছিন্ন করে নিরাশায় নিদ্রাহীন
সংকটে দাঁড়িয়ে আছে তাবৎ পৃথিবীর বণি আদম
এটাও তো একযুদ্ধ এই যুদ্ধে কোন শত্রুপক্ষ নেই
কার বিরুদ্ধে দাগাবে আনবিক যুদ্ধ কামান
মানুষ মারার অস্ত্র কোন কাজে লাগলো না আর
অকেজো সেই অস্ত্রের দোকানিরা বড় অসহায়
অতিশয় সেই অক্ষম দানবের দঙ্গলেরা
কী আর বলবে এখন উপায়হীন সময়ে
কোন মহাশক্তির কাছে বাঁচার প্রার্থনা করবে
সব পরাশক্তি পরাজয়ের গ্লানিতে কোন গুহায় লোকাবে তাদের মুখ? আহারে জীবন!
আকাশ বিদীর্ণ হলে আকাশের পথ জানা নেই
অনন্ত সড়ক পথে ড্রোন থেমে যাবে অনায়াসে
মঙ্গলগ্রহে কেনা নেই অবকাশ অবসরভবন
অসহায় হয়ে গেছো আমাদের মত সাধারণ তুমি
এবার থামো এখানে ভেবে দ্যাখো
তোমার সোনালি চোখে ঈর্ষার আগুন নেভাও
ভেঙ্গে ফেলো দম্ভঘর
মিথ্যার ফানুসে ওড়ে আর দিয়ো না ধ্বংসের হুঙ্কার
সামান্য ভাইরাসের কাছে বারবার হেরে গেলে প্রভু
মানুষের শ্রেষ্ঠতর উপমা খুব ছোট হয়ে যাবে
এই পৃথিবীর কাছে
মানুষ শ্রেষ্ঠ থাকুক আঠারো হাজার সৃষ্টির কাছে।
এই সময়ের হাহাকার
সশব্দ এই সংসারে বাজার সদাই নেই বলে
হাঁড়িতে দিয়েছি কাল সময়ের উত্তপ্ত ঘড়ি
ধোঁয়ার ধূর্ত কুণ্ডলি ভূতের মতোন উড়ে উড়ে যায়
ক্ষুধার্ত ভ্যানচালকের চাকায় ঘুরছে উপোস উদর
রাজমিস্ত্রির হাতে গড়ে স্বকালের বহুতল ইতিহাস
কষ্টরকম উঠোনে বপন করছি বেদনার ঝাউবন
শ্রমিকের বেহালায় করুণ সুরের হাহাকার ধ্বনি
অভোগ্য এই জীবনে কেউ দাঁড়াতে পারে না
অফিস পাড়ায় তালা স্যারের বাড়িতে লকডাউন
বেতন ভাতায় ঝরে পৃথিবীর সমস্ত অভিশাপ
কর্মহীন কর্পোরেট চলে গেছে হাঙরের পেটে
অনিষ্ট এই সময়ে পাখির কাকলি থেমে গেছে
সুখের বালিশে আজ মাথা রাখে কষ্টের রাত
পেটের পায়চারি দেখে ঘেউ ঘেউ করে না ত আর
এই বাড়ির আপন বহু পুরাতন ভৃত্য পালিত কুকুর।